(একাদশ পর্বের পর...)
কাছে আসতে, কিছুটা জোর করে স্বাভাবিক সুরে বললাম, "পাঞ্জাবীতে ভাল লাগছে!" ও কোন উত্তর দিল না। বলল, "চল।"
ওর বাইকে উঠলাম। ও সামনে বসেছে। আমার চোখের সামনে, একেবারে কাছেই ওর বিশাল, চওড়া পিঠ। হাত দুটো বাড়িয়ে ওর পেটের দুদিকে পাঞ্জাবিটা খামচে ধরতে গেলাম, কিন্তু হাত দুটো এগিয়েও পিছিয়ে এল। যেন ওর আর আমার মধ্যে একটা ঘন দূরত্ব তৈরি হয়েছে কোথাও। কাবিদুল'দা নিজেই সামনে থেকে হঠাত বলল, "কি হোল! ধর!?"
আমার খুব ইচ্ছে করছিল ওকে আগের দিনের বিকেলের মত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ওর পিঠে মাথা রাখতে, কিন্তু পারলাম না। আমি দু হাতে ওর পাঞ্জাবি খামচেই ধরলাম।
গাড়ি যাচ্ছে বাজার এর পাশ দিয়ে এগিয়ে, ক্রশিং টপকে রানিবালা স্কুল, তার বামদিক দিয়ে এগিয়ে ফুলবাগান থেকে সোজা... আমি জিজ্ঞেস করিনি কোথায় যাচ্ছি। ও নিজেকে গুটিয়ে রাখলে আমি ওর কাছে ঘেঁষার সাহস পাইনা, কিন্তু মনে হোল ও ওই পুরনো জমিদার বাড়িতেই যাচ্ছে। কেউ থাকেনা বাড়িটাতে। রাত্তিরে চোর-ছ্যাঁচোর এর উৎপাতও এদিকে খুব। এলাকায় লোকজন খুব কম। যে কটা বাড়ি আছে সবই পেল্লাই মাপের। বাড়িগুলোয় নাকি জমিদার বংশের লোকই থাকে, কিন্তু জীবনে কোনদিন কাউকে বাড়িগুলোতে দেখিনি। জানলা বন্ধ, বারান্দা সব ফাঁকা। ছাদে কাপড় শুকনো হতে দেখে বোঝা যায় যে বাড়িতে লোক থাকে।
সন্ধ্যে হয় হয়। আমরা জমিদার বাড়ির মেইন ফটক পেরিয়ে একটা মাঠ, যেখানে এককালে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হত, তার পাশ দিয়ে এগিয়ে জমিদার বাড়ির সামনে আসতে, কাবিদুল'দা গাড়ি থামাল। গাড়ি থেকে নেমে, লক করে ও আগে আগে হাঁটতে লাগলো। আমি পেছনে। আশেপাশের গাছের শীতকালের শুকনো পাতায় মাটি ভরে আছে। আমাদের হাঁটার সময়, শুকনো পাতা ভাঙ্গার মচ মচ শব্দ, চারপাশটাকে যেন তাদের দুপুরের ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে। জমিদার বাড়ি সংলগ্ন বাঁধানো, বিশাল পুকুর ঘাটের কাছে কাবিদুল দা বলল, "এখানে বস!"
বসলাম একটা সিঁড়ির ধার ঘেঁসে। আকাশ কালচে নীল রঙ নিতে শুরু করেছে। চারপাশে কেউ কোথাও নেই, নিস্তব্ধ পরিবেশ। পুকুরের জল স্থির, নিকষ কালো। এমনিতে আমি সেভাবে ভিতু নই, আবার সঙ্গে কাবিদুল দা'ও আছে তবুও কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগলো। এখানে এসেছি আগে, বাড়িতে আমাদের আত্মীয় এলে আমিই নিয়ে এসেছি এই জমিদার বাড়ি দেখাতে। কিন্তু সে সব সকাল বেলা, আর কখনো এভাবে ঘাটের সিঁড়িতে বসিওনি।
কাবিদুল দা আমার ডানপাশে বসে পড়ল। পুকুরের জল সিঁড়ির যে ধাপে ঠেকেছে তার ঠিক এক ধাপ উপরে আমাদের পা, তার দু ধাপ উপরে আমরা পাশাপাশি বসেছি।
দুজনেই চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন। তারপর আমি পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে, সরাসরি বললাম, "কার্ত্তিক দা আমায় সকালে ফোন করেছিল।" তারপর থেমে গেলাম। কি বলব আর বুঝতে পারলাম না। ওর দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছিনা। কাবিদুল দা নিজের বামহাত বাড়িয়ে আমার ডানহাতটা ধরে নিজের কোলের কাছে এনে নিজের দু হাত দিয়ে আমার হাতটা টিপতে টিপতে বলল, "তুমি...."
গলা বুজে গেছে ওর, আর কথা বলতে পারছেনা। আমার হাতে একফোঁটা জল পড়তে আমি পাশ ফিরে দেখি ও তাকিয়ে আছে পুকুরের জলের দিকে, সন্ধ্যে হবার আগের মুহূর্তের হাল্কা আলোয় ওর চোখে জল টলটল করছে বুঝতে পারলাম।
আমার বুকটা যেন ফেটে গেল ওর মুখটা ওইভাবে দেখে। আমি পাশ ফিরে, বাম হাত দিয়ে, "এই এই, কাবিদুল দা" বলে ওর চোখের জল মুছতে গেলাম। আমারও গলা বুজে এল এবার। দুঃখের একটা স্রোত যেন বয়ে গেল আমার গোটা শরীরে। কাবিদুল দা নিজের ডানহাত দিয়ে আমার জল মুছতে যাওয়া হাতটা ধরে নিজের মুখের কাছে চেপে ধরল। আমার হাতে চুমু খেল। তারপর আমার দুটো হাত নিজের দুহাতে একসাথে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "তোমার কি মনে হয়, যে আমি...আমি তোমার চেন চুরি করেছি!?"
ওর চোখে জল, ঠোঁট কাঁপছে। আমার অবস্থাও তাই। আমি ওর দিকে আরও এগিয়ে গিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, "দেখো আমাকে। জ্বলছ তুমি আর আমি যে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি দেখতে পাচ্ছ না!? শ্বাস তুমি নিচ্ছ আর আমি যে সেই বাতাশের মধ্যে বাঁচছি, দেখতে পাচ্ছ না!? আমাকে তুমি জিজ্ঞেস করছ আমি তোমায় বিশ্বাস করি কিনা!? আর যদি সত্যিই প্রশ্নটার উত্তর চাও তাহলে আমার উত্তর হবে, আমি জানি না। আমি কিছুই জানিনা আর। তুমি কে, আমি কে, আজকের এই কথোপকথনের ভবিষ্যৎ কি, আমি জানি না। শুধু এটুকু জানি, নিশ্চিত জানি যে.... তুমি ভাল না থাকলে আমি ভাল থাকব না"
কথাটুকু বলে, নিজের দুহাত ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে ওর মুখটা নিজের দু হাতে ধরে, আরও কাছে গিয়ে ওর কপালে চুমু খেলাম। আমাদের দুজনের শরীর কাঁপছে। ও আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আমার গলায় নিজের মুখ ঘষতে লাগলো আর গোঙাতে লাগলো। গোঙ্গানিটা কষ্ট আর রাগ মেশানো। ও আর কাঁদছেনা, শুধু গোঙাচ্ছে।
আমি কাঁদতে কাঁদতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, "তুমি... তুমি আমাকে.. একটু সময় দাও। যা করতে হয় আমি করব, যে মুলুকে যেতে হয় আমি যাব, কিন্তু আমি তোমাকে এই দশায় ফেলেছি। আমি তোমাকে এখান থেকে বের করবোই। একটু...... একটু সময় দাও।"
ও আর মুখ ঘসছেনা গলায় কিন্তু মুখটা আমার গলার কাছেই চেপে আছে। ওর গরম শ্বাস আমার টিশার্ট এর ভেতর দিয়ে ঢুকে আমার মাইয়ের বোঁটাগুলোকে শক্ত করে দিচ্ছে। আমার ওর মাথায় স্নেহসুলভ হাত বোলানো ক্রমে যৌন উত্তেজনার কারনে অন্যরুপ ধারন করছে। কাবিদুল'দা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই বোধয়, আমার গলায় একটা চুমু খেয়ে নিজেকে সরিয়ে নিল।
তারপর পুকুরের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি আমায় বিশ্বাস কর, সেটুকুই এনাফ। আর কিছু করতে হবে না। আমি দেখছি। যা করার আমি করব।"
আমিও এবার নিজের চোখ মুখ, জামাকাপড়, চুল ঠিক ঠাক করে, ওর দিকে তাকিয়েই বললাম, "কি করবে!?"
-"মোমো খাবে!?"
-"হোয়াট!?"
-"মোমো! চিকেন মোমো!" কাবিদুল দা আমার দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলল।
-"ত্যাত! তুমি কি করবে বলছিলে সেটা বল।!"
-"এই তো! মোমো খাবো আর তোমাকেও খাওয়াব। আর এই, তোমার মশা লাগছে না!? বাপরে কত মশা!" বলে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাত পা ছুঁড়তে লাগলো।
-"কোথায় মশা! হ্যাঁ, অস্বাভাবিক, কিন্তু মোটেই মশা নেই এখানে। তুমি কথা ঘোরাবে না একদম। বল বল কি করবে বলছিলে!"
কাবিদুল দা হঠাত উঠে পড়ে, "না না চল চল। অন্ধকার হয়ে গেল। চোর ডাকাত এসে অ্যাটাক করলে কি হবে!? আমি কাউকে বাঁচাতে পারব না।"
পরিস্কার বুঝলাম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছে। কি করবে আমায় বলবে না। আমিও কম জেদি নই। গ্যাঁট হয়ে বসে বললাম, "তুমি কি করবে আমায় না বললে আমি উঠব না! যাও একা একা মোমো খেতে যাও"। কাবিদুল দা সে কথা শুনে, "তবে রে" বলে আমার দিকে ঝুঁকে দু হাত বাড়িয়ে একহাত আমার দুই হাঁটু এর তলা দিয়ে, আর আরেক হাত আমার পিঠ দিয়ে ঘুরিয়ে আমার বাম হাত চেপে আমায় কোলে তুলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। আমি মৃদু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম বটে কিন্তু ওর এরম উৎফুল্ল ভাবটা যাতে কেটে না যায় সেজন্য বেশি জেদ করলাম না।
অন্ধকার হয়ে এসেছে। ওর মুখটা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু ওর শরীরের সাথে লেপ্টে থেকে বুঝতে পারছিলাম যে, শুধু আমি ওকে বিশ্বাস করি জেনে ও কতখানি শান্তি পেয়েছে। এই কথাটা নিজের কাছে নিজেই আরেকবার বলতে, কষ্টে, ভালোলাগায় আমার চোখ দিয়ে ঝপঝপ জল বেরিয়ে গেল।
ও আমাকে কোলে করেই গাড়ি অবধি নিয়ে এল। আমি ওর দিকে তাকিয়েই আছি। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কি হোল নামো!"
-"এরম করেই মোমো খেতে গেলে হয়না!?"
-"হ্যাঁ হয়, কিন্তু আমার কোমরের সাড়ে বারোটা বেজে যাবে তাহলে!"
-" আরে তোমায় আজ আর জিমে যেতে হত না। খেতে যাওয়া আর ওয়েট লিফটিং একই সাথে হয়ে যেত!"
-"জিমে এত ওয়েট লিফট করতে হয় না। তুমি নামো নামো।" বলে হাসতে লাগলো।
আমি ওর গলা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, দুষ্টু হেসে বললাম, "আচ্ছা!!!????? তাই নাকি!? তুমি বলতে চাইছ আমি মোটা!? হ্যাঁ!? এবার তো আরই নামব না।"
-"আমি ফেলে দিচ্ছি তাহলে!"
আমি ওকে চেপে ধরে নিজের ঘার তুলে ওর গলায় চকাত করে একটা চুমু খেয়ে লাফিয়ে নেমে পড়লাম। ও, "উউউহ!" করে উঠে নিজের হাত দিয়ে গাল মুছে গাড়িতে উঠে পড়ল। আমি পেছনে। গাড়ি স্টার্ট দিতে ওর পেটটা জড়িয়ে ধরে মুখটা একপাশ করে ওর পিঠে রাখলাম। বাইক ছেড়ে বেরিয়ে গেল, তখন বাজে প্রায় সাড়ে ছটা।
(ক্রমশ.....)
(অনুগ্রহ করে ব্লগের নিচের কমেন্ট বক্সে জানান, কেমন লাগছে পড়ে। এতে উৎসাহ পাওয়া যায়।)
পরের পর্বের অপেক্ষা করছি,চমৎকার লাগছে ওদের সম্পর্কটা!
ReplyDeleteপরের পর্বের অপেক্ষা করছি,চমৎকার লাগছে ওদের সম্পর্কটা!
ReplyDeleteখুব ভালো লাগছে গল্পটা পড়তে। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করে রইলাম ��
ReplyDeleteলিখা কী ছেড়ে দিলেন? পরের পর্ব গুলোর অপেক্ষায় আছি
ReplyDeleteYeh vai koi golpo koi? r kodin wait koraben. wt least eid upolokkhe hoileo post koira den. regular ghuri miya. apnar story er khoj nai
ReplyDeletePlease continue this story...
ReplyDeletePorer porbo din please ��
ReplyDeleteআর কতদিন ভাই পরের পর্ব টা কতদিন পর আপলোড করবেন
ReplyDeletePlease bring back kabidul da...
ReplyDeleteপরের পর্বেটা দেন প্লিজ 🥺🥺🥺🥺
ReplyDeleteNext episode please
ReplyDeleteEto shundor golpo tar lekha chhere dilen keno?
ReplyDelete