( নবম পর্বের পর...)
ঘরে এসে জামাকাপড় পাল্টালাম। টিশার্টটা খোলার সময় নিজের বগলে চোখ পড়ল। কিছুটা লাল্ভাব আছে। টিশার্ট খুলে নাভির কাছটা আমার ডানহাতের তর্জনী দিয়ে কিছুটা হাত বোলালাম। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেরই লজ্জা লাগছে যেন।
ও আমায় ভালোবাসে নাকি এ কেবল শরীরী টান, সেই বিশ্লেষণে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে হল না এখন। ভালোলাগাটা থাক, আপাতত। সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে মানুষের কাছে একদিন কোন প্রশ্নই থাকবে না, কিরম বোকাবোকা হয়ে যাবে সেদিন পৃথিবীটা, নাহ! কিছু প্রশ্ন এখন থাক।
হটাত ফোনে মেসেজ। কাবিদুল দা'র।
-"কি করছ।"
-"এই চেঞ্জ করলাম। তুমি পৌঁছে গেছ।?"
-"মম, প্রায়। তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও পারলে।"
-"না না, শোব না। আমি বরং একটু পড়তে বসি। রান্না বান্না জানলে একটু কিছু বানিয়ে রাখতে পারতাম। মা'কে আবার এসে সব রান্না করতে হবে।"
-"হ্যাঁ, হ্যাঁ পড়তে বস বরং। আর... আম্মম.."
-"কি মম!?"
-"না, কিছু না। আমি কাটছি, পৌঁছে গেছি।"
-"আমি রাত্রে টেক্সট করবো। টাটা।"
ও মেসেজটা দেখে অফলাইন হয়ে গেল। আমি ফোন সরিয়ে নিজের পড়াশোনায় মন দিলাম। দিদি আসা থেকে ফাঁকিবাজি চলছে, আবার কদিন পরই সরস্বতী পুজো। নাহ! পড়ে নিই মন দিয়ে।
মা, বাবা এল সাড়ে আটটায়। বাবার সাথে আমার কাল কথা হয়নি, আজও সকালে হয়নি। আমি দরজা খুলতেই, বাবা ঘরে ঢুকে জুতো খুলেই বলতে শুরু করল, "হ্যাঁ রে, তোর নাকি গলার চেন চুরি হয়েছে!? তোর মা বলল গাড়িতে যেতে যেতে!" বাবার গলার এই টোনটা আমি চিনি। মা যে বাবাকে সামলাতে পারেনি সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মা আমার দিকে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।
-"না ওই আমি গাড়িতে বসেছিলাম, কাবিদুল দা বাইরে বেরিয়ে..."
"সবটা সাজানো" বাবা চিৎকার করে বলে উঠল। এইজন্য মুসলিমদের বিশ্বাস করতে নেই। এতদিন বাইরে যাচ্ছিস, এত ভিড় বাস, ট্রেন করে যাতায়াত করছিস। তখন কিছু হল না!? আর একদিনেই একটা গেঁয়ো জায়গা দিয়ে গাড়িতে আসতে আসতে চুরি হয়ে গেল!?"
-"কাবিদুল দা দৌড়ে..."
বাবা আমার কথা কেটে বলল, "ও তো পাবে না! ওর পাওয়ার কথাও না! হেহ!! নাহ, আমি কার্ত্তিক কে বলবো নয় ক্ষতিপূরণ দাও নাহলে আমায় আইনি রাস্তায় যেতে হবে।"
আমি মরিয়া হয়ে উঠে বললাম, "কিন্তু থানায় ডায়েরি তো আমি আজ করে এসেছি! কাবিদুল দা'ই সাথে গেছিল।! কি সব বলছ তুমি। দোষটা সম্পূর্ণ আমার। তুমি অন্য লোককে হ্যারাস করবে কেন!?"
-"যে দোষ করে তার মুখে এত কথা আসে কোত্থেকে!! টাকা রোজগার করেছিস কখনো? যে বুঝবি কত ধানে কত চাল!? হারটা বিক্রি করলে ৫০ হাজার তো পাবেই। সেখান থেকে ৫ টা লোককে কমিশন দিলেও মোটা টাকা হাতে পাওয়া যাবে! আমায় যদি কার্ত্তিক ক্ষতিপূরণ না দিতে পারে তাহলে আমি থানায় ওর নামে ডায়েরি করবো। ঘটনাটা কাকতালীয় আমি বিশ্বাস করি না!"
বাবা রেগে গেলে কতটা নিষ্ঠুর আর যুক্তিহীন হতে পারে সেটা আমি, মা, দিদি সবাই জানি। আত্মসম্মানে আঘাত করে কথা বলতে দুবার ভাবে না। আমি রেগে আগুন হয়ে, কোন কথা না বলে নিজের ঘরে এসে দরজা দিয়ে দিলাম ভেতর থেকে। শুনতে পেলাম বাবা ডিনার টেবিলে বসেই ফোন করেছে কার্ত্তিক দা কে। চিৎকার করছে।
রান্না সেরে মা আমার ঘরে এল। আমি বই মুখে নিজের বিছানায়। বই ওই নামেই চোখের সামনে, মাথায় দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। কি হবে!? কাবিদুল দা'র কোন ক্ষতি!? আমি যা ভাবছি তেমন যদি... কিন্তু কাবিদুল দা তো কার্ত্তিক দা'র বন্ধু...
মা বিছানার পাশে বসে বলল, "দুপুরে কি খেয়েছিস!? সিঙ্কে কোন বাসন টাসন দেখলাম না!"
আমি বইয়ে মুখ রেখেই বললাম, "কাবিদুল দা'র সাথে থানায় গিয়েছিলাম সকালে। ও তোমরা থাকবেনা জেনে জিজ্ঞেস করল আমি দুপুরে কি খাব। ম্যাগি শুনে বলল ওদের বাড়ি খেতে। না শুনল না। ওখানেই খেয়েছি।"
-"এত আদিখ্যেতা..."
মায়ের দিকে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতে মা নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করল, "শুভ তুই বল! তুই কোন গন্ধ পাচ্ছিস না!? গতকালই ওর সাথে প্রথম আলাপ! আজই ওর বাড়ি ডেকে নিয়ে গিয়ে তোকে খাওয়াল!? তুই ওর কে হোস, হ্যাঁ!? তুই ওর সাথে আর একদম কোন যোগাযোগ রাখবি না।"
আমি মুখটা আবার বইতে নামিয়ে শক্ত অথচ চাপা গলায় বললাম, "তোমরা বাড়াবাড়ি করছ! আমি অত ছোটও নেই যে আমি কিছুই সেন্স করতে পারব না!"
-"ওসব কথা ছাড় এখন। ওর এত বেশি পিরিত আমার ভীষণ সন্দেহের লাগছে। আজকে থানা অবধি গেছিস না হয় তবু ঠিক ছিল, কিন্তু দুপুরে...."
-"তুমি ওর জায়গায় থাকলে সামনের মানুষটাকে খেতে বলতে না!?"
মা বিছানা ছেড়ে উঠে বলল, "যা বোঝো না তা নিয়ে আনাড়ি তর্ক কোর না। খাবার বাড়ছি খাবে এস।"
মা রেগে গেলে আমায় বা দিদিকে "তুমি" বলে সম্বোধন করতে শুরু করে। মায়ের অস্বস্তির কারন সম্পূর্ণ অবান্তর না হলেও, কাবিদুল দা'কে আমি.., ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, ওর চোখে জল। মাসিমা! নাআআআ.... এ হতেই পারে না। উফ! আমি কেন চেনটা খুলে গেলাম না! কেন ভুলে যাই যে এ বাড়ির কোনকিছুই আমার না! কিছু নষ্ট হলে, হারিয়ে গেলে আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য!! আআহ!
মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। আমি বিছানায় বসেই বিরুক্তির সুরে বললাম, "আমি...আমি খাবো না। খিদে নেই, পেট ভার!"
মা চিৎকার করে উঠল। "কি হচ্ছেটা কি হ্যাঁ!? বাবা মা কিছু বললেই গোঁসা?? আর সবার আগে খাওয়া বয়কট। বুদ্ধি বলে যে তোর কিছু নেই সেটা তোর রাগ দেখেও বোঝা যায়। নিজেকে কষ্ট দিয়ে অন্যের ওপর রাগ দেখান।"
মাকে উত্তর দিতেই যাচ্ছিলাম, ফোনটা বেজে উঠল। হোয়াটসাপ মেসেজ। কাবিদুল দা নির্ঘাত। ইস! আমি বলেছিলাম আমি মেসেজ করবো। ধ্যাত! পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখলাম, হ্যাঁ ওই করেছে।
মা বকতে শুরু করলে আর থামতে চায়না। আমি মা'কে চুপ করাতে চেঁচিয়ে বললাম, "হ্যাঁ হ্যাঁ খেতে..খেতে যাচ্ছি, তুমি প্লেটিং কোর। আসছি। দশ মিনিট।"
মা মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। পরক্ষনেই আবার গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।
কাবিদুল দা শুধু একটা প্রশ্নচিহ্ন পাঠিয়েছে। ও নিশ্চয়ই আশা করেছিল আমি মেসেজ করবো।
-"হ্যাঁ ওই বাবা, মা এল। ওদের সাথে কথা বলতে বলতে..." টাইপ করে পাঠালাম।
-"ভুলে গেছ!?"
-"তোমার সেটা মনে হলে, তাই... আমি নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করবো না!"
-"😏"
-"তুমি কখন ফিরলে!? খেয়েছ!?"
-"হ্যাঁ ফিরে,খেয়ে, এখন বিছানায় শুয়ে আছি!"
আমি ঘড়ি দেখলাম। "এগারোটা বাজে, এর মধ্যেই বিছানা!?" জিজ্ঞেস করলাম।
-"না আসলে কাল রাত্রে কেন জানিনা ভালো করে ঘুম হয়নি। তোমার এমন চেনটা চুরি হয়ে গেল। ভেবেছিলাম আজ দুপুরে ঘুমিয়ে নেব, কিন্তু দুপুরে তো...."
আমি ফোনের দিকে তাকিয়েই লজ্জায় লাল হয়ে বললাম, " আমি খেতে গেলাম। দশ মিনিটে আসছি।"
-"হম" কাবিদুল দা বলল।
(ক্রমশ....)
(অনুগ্রহ করে ব্লগের নিচের কমেন্ট বক্সে জানান, কেমন লাগছে পড়ে। এতে উৎসাহ পাওয়া যায়।)