কাবিদুল দা (পর্ব ৭)

 (ষষ্ঠ পর্বের পর...)


ঘরে ঢুকে জুতো খুললাম। মাসিমা মানে কাবিদুল দা'র মা সামনে দাঁড়িয়ে। বয়স খুব বেশি নয়, ওই আমার মায়েরই বয়সি কিন্তু বয়সের তুলনায় শরীরের অবস্থা মন্দ। আমি এগিয়ে প্রনাম করলাম। উনি হালকা হাঁপাতে হাঁপাতে, ঈষৎ হেসে বললেন, "এসো এসো। কাবিদুল কাল বলছিল তোমার চেন চুরির ব্যাপারে। তোমার বড় ক্ষতি হয়ে গেল বাবা। আজকের দিনে সোনা চুরি। আমি কাবিদুল কে বকলাম কাল। ওর আরেকটু চেস্টা করা উচিত ছিল। ওই একটু দৌড়ে গেছে শুধু..." বলে কাবিদুল দার দিকে একটু আশাহত ভাবে তাকালেন।

-"না না মাসিমা। কাবিদুল দা চেষ্টা করেছে। রাত্রে, ওরম মাঝ রাস্তায় আর এর চেয়ে বেশি কিছু করার ছিলও না। ওই বলল কিভাবে ডায়েরি করতে হবে। আমার মাথায় নাহলে কিছুই আসত না এসব।"

-"হ্যাঁ! ও তো হরদম থানায় যায়। কতো লোকের যে কতো কাজ উতরে দিয়েছে! থানার বড়বাবু ওকে ভালোবাসেন খুব। সব আল্লার দয়া। ছিল বলতে তো শুধু এই জমিটুকু, নাহলে ওর আব্বা যাবার পর..." বলে শাড়ীর আঁচল সামনে এনে নাকের কাছে ধরলেন। গলা ধরে গেছে উনার। চোখ মুছতে মুছতে উনি টিভির পাশে রাখা একটা প্লাস্টিকের টুলে বসে পড়লেন।

"আআহ মা! ছাড় এখন এসব! ও আগে বসুক! কোথায়ই বা বসাবো। সোফা কই!?", বলে কাবিদুল দা আমার দিকে চেয়ে একটা দুষ্টু হাসি হাসল। আমি ওর দিকে একটা বিষদৃষ্টি দিয়ে ঘরের মধ্যে রাখা একটা হাতল ওয়ালা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলাম। একটাই ঘর, কিন্তু বেশ বড়। সিমেন্টের লাল মেঝে। হালকা হলুদ রঙের চুনকাম করা দেওয়াল। রান্নাঘর, বাথরুম সবই বাইরে, সেগুলও টিনের চালা দেওয়া। একটা ঘরের মধ্যে সব হলেও বেশ গোছানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সবকিছু। বিছানার চাদর সাদা আর গাড় নিল, খুব সুন্দর দেখতে। ঘরের দুদিকে দুটো সিলিং ফ্যান, যেন সদ্য কিনে লাগানো; এতই পরিস্কার। মনে মনে ভাবলাম, ছেলের সৌন্দর্য বোধ যথেষ্ট।

-"এত কি দেখছ!? বেশি কিছু দেখার মতো জিনিষই নেই!!" কাবিদুল দা, দেওয়ালের গায়ে লাগানো আলনা থেকে একটা হাফ প্যান্ট আর একটা গোলগলা, স্লিভ্লেস টিশার্ট হাতে নিয়ে বলল।

-"দেখতে হলে দেখার জিনিষেরও আগে, দেখার চোখ লাগে! বিছানার চাদরটা কি সুন্দর!! ওটাই দু মিনিট ধরে দেখা যায়।!

-"কথার ভটচাজ একেবারে! ওই একটা জিনিস খুব ভালো করে শিখেছ। এদিকে কোনভাবে বাইরে কোন বিপদে পড়ে আটকে গেলে ম্যাগি না পেয়ে, শুকিয়ে থাকবে।" বলে কাবিদুল দা ওপাশের দড়িতে টাঙ্গানো একটা গামছা পড়ে নিজের প্যান্ট, জামা ছাড়তে লাগলো।

-"তুমি রান্না জানো না বাবা!? কাবিদুল সব রান্না পারে। ওই রান্না আর বাগান করা ওর শখ। বেশি বন্ধু বান্ধবের ঝোঁক নেই জানতো!? আজকের মাংস ওই রান্না করেছে। বাকিসব আমি যা পেরেছি করেছি। এই দ্যাখো এত কথা বলছি, তোমার নামটাই জানা হয়নি। কাবিদুল কাল একবার বলল যেন, কি নাম তোমার বাবা!?"

আমার কানে কিছু ঢুকছে না এখন। আমি হাঁ করে কাবিদুল দা'র পোশাক পাল্টানো দেখছি। জামা আর ভেতরের স্যান্ডো গেঞ্জি খুলতেই বেরিয়ে এল কাবিদুল দা'র পেটানো, যৌন আবেদনে ভরা শরীরটা। উফ! নাভিটা কি সুন্দর। গোটা গা শেভ করা হয় নিয়মিত। হালকা হালকা গায়ে লোম উঠেছে। জিন্সটা নাভির অনেক নিচে। বোঝা যাচ্ছে বাঁড়ার বেদিও কামানো। সে অবশ্য বিশেষ ব্যাপার না। যারাই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সজাগ তারাই শরীরের প্রাইভেট পার্ট শেভ করতে পছন্দ করে।

জিন্সের ওপর গামছা জড়িয়ে প্যান্টটা নামিয়ে দিল কাবিদুল দা! ইস! যদি এখন শালার গামছাটা না থাকতো!! ধ্যাত! তারপর গামছার তলা দিয়ে নেমে এল জাঙ্গিয়াটাও। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। লাল রঙের ইলাস্টিক দেওয়া কালো রঙের ব্রিফ! ইসস! যদি একবার শুঁকতে পেতাম!! কাবিদুল দা এবার টিশার্টটা হাতে ঢুকিয়ে, দুহাত তুলে টিশার্ট পরার সময় লক্ষ্য করলাম, যেটা আগে লক্ষ্য করিনি, যে ওর বগল চুলে ভর্তি। একেবারেই শেভ না করা বগল। এ আবার কি! গোটা গা, এমনকি পা পর্যন্ত শেভ করা যার, তার বগল কামানো নয়!? পিপাশু চোখে যেন গিলছি ওই ঘামে লেপটে থাকা বগলের চুলগুলোকে। কি মারাত্মক সেক্সি লাগছে!! উফ যদি নিজের মুখটা ঘষতে পারতাম... এই এহহ কিসব ভাবছি!! ত্যাত ত্যাত!! শুভভভভভভ কাবিদুল দা একজন ভালো মানুষ, একটু বেশিই ভালো তার বেশি ভাবিস না... ও সোজাসুজি কিছু বললে তারপর ভাববি!! 

-"এই শুভ!!!?"

-"হ্যাঁ!? হ্যাঁ? কি হয়েছে!? কার বিয়ে!?"

-"ত্যাআআত! মা তোমার নাম জিজ্ঞেস করলো এই নিয়ে তিন বার! কি ভাবছ এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে!!?"

আমি লজ্জায় যেন মাটিতে মিশে গেলাম। মাসিমার দিকে তাকিয়ে ঘটনাটা ম্যানেজ দিতে বললাম, "আসলে মা আর বাবা ওই আমার দিদাকে দেখতে গেছে। দিদা অসুস্থ। ওইজন্য একটু বেখেয়াল হয়ে পড়ছি মাঝে মাঝে।" কথাটা বলে কাবিদুল দা'র দিকে তাকালাম। ও একটা সন্দেহের চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

-"ওবাবা! তাই নাকি!? আল্লা তোমার দিদাকে সুস্থ করে দিক বাবা! সত্যিই তো নানি কতো ভালোবাসার মানুষ। কাবিদুল এর বোন, আমার মেয়েটার তো এই ছোট্ট বাচ্চা। এই ছ মাসের। ছেড়ে থাকতে আমার কি কষ্ট বাবা! আচ্ছা সেসব থাক। এসো তোমরা খেয়ে নাও। বেলা হচ্ছে।" বলে আমার সামনের টুল ছেড়ে উঠে পড়লেন কাবিদুল দা'র মা।

কাবিদুল দা, "আমি একটু আসছি!" বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মাসিমা, "এই কোথায় যাচ্ছিস। তাড়াতাড়ি আয়, খাবার বাড়ছি" বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। "আসছি এখুনি, তুমি ভাত বাড়ো" কাবিদুল দা'র উত্তর। পায়ে চটি গলিয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে গেল।

আমি চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মাসিমার হাতে হাত লাগালাম। উনি বাধা দিতে গেলেন প্রথমে, আমি শুনলাম না। উনার শরীরের যা অবস্থা এখন উনার শুয়ে, বসে থাকলে ভালো হয়। সেখানে এত কাজ করেছেন, করছেন। ওইভাবে বসে থেকে উনাকে কাজ করতে দেখা অসম্ভব!!

-"এসব বাবা মায়ের শিক্ষে গো বাবা! বাবা মা নেক মানুষ, তাই ছেলে এমন। আজকালকার মেয়েগুলোর মধ্যেও এমন সাহায্য, সেবা করার মন নেই গো বাবা!"

আমি কোন উত্তর না দিয়ে, মৃদু হেসে খাবার দাবার মেঝেতে, যেখানে খাওয়া হবে, সেখানে রাখলাম। আসন পাতলাম। তিনটে আসন পাততে মাসিমা জিজ্ঞেস করলেন, "তিনটে কেন পাতলে বাবা। আমি এখন খাবো না, তোমরা খেয়ে নাও!! আমি তারপর কাবিদুলের পাতেই বসে যাবো!"

আমি সে আবদার শুনলাম না। বললাম, "না! এই কথাটা আমি কিন্তু শুনবো না মাসিমা। আপনার বয়স হয়েছে। আপনার বরং সবার আগে খেয়ে বিশ্রাম করার কথা, তা তো হচ্ছেই না, তার ওপর আপনি বলছেন আপনি আমাদের পরে খাবেন। কতো দেরি হবে ভাবুন!? এই বয়সে অত অবেলায় খেলে হজমে সমস্যা হয়, সেখান থেকে শরীর খারাপ করে। তাই আপনি আমাদের সাথেই বসে পড়ুন।"

-"কাবিদুল ঠিকই বলেছে বাবা, তোমার সাথে কথায় পারা যাবেনা।" কাঁপা কাঁপা গলায় মাসিমা বললেন। তারপর চোখ মুছে, "উফফ! এই ছেলেটা দুপুরবেলা কোথায় গেল, আমি যেন আর পারিনা। বিয়ে দিলে তবে জব্দ হবে। তখন দেখব কিকরে এমন টইটই করে বাইরে ঘোরে।"

ধাক্কাটা কোথায় লাগলো বলতে পারি না, কিন্তু আমার মাথাটা একবার যেন ঘুরে গেল কথাটা শুনে। মেঝেতে একটা হাত ঠেকিয়ে নিজেকে স্থির রেখে, মাথা নিচু করে বললাম, "হ্যাঁ হ্যাঁ, দিন বিয়ে। বিয়ে হলে শুধরে যাবে। সবাই......যায়"

-"আরে সেকি আমি চেষ্টা করছি না ভাবছ!? কিন্তু তেমন মনের মতো কাউকে পেলে তবে তো। আমার ছেলেটা আবার আর পাঁচটার মতো তো না। অবসর সময়ে বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে, বাগান করে, রান্না করে। আর কাজের সময় শুধু কাজ। ওর মনের মতো মেয়ে পাওয়াও মুশকিল। দেখি আল্লা কবে কি যোগাযোগ করেন।" বলতে বলতে থালায় ভাত বাড়তে লাগলেন উনি।

-"কি যোগাযোগের কথা হচ্ছে!!?" পেছন থেকে কাবিদুল দা'র প্রশ্ন। হাতে দইয়ের হাঁড়ি। 

-"ও দই আনতে গেছিলি!?" চমকে উঠে মাসিমা বললেন। "খুব ভালো করেছিস। আমার মাথায় ছিল না, বয়স হবার এই জ্বালা। এই দেখনা ও আমায় জোর করে খেতে বসাল। বলে অবেলায় খেলে হজম হয় না, শরীর খারাপ করে। আমার কোন কথা মোটে শুনল না। আমিও ওর কথার সাথে পারলাম না। বসেই পড়লাম।"

-"বেশ করেছে। আমি এত্তদিন বলে বলে গলা শুকনো করে ফেললাম। এখন নাও, খাও আমাদের সাথে। শুভকে আমি এরপর থেকে রোজ আনছি দাঁড়াও!" কাবিদুল দা'র গলায় প্রসন্নতার ভাব স্পষ্ট।

আমি মুখ তুলে তাকালাম কাবিদুল দার দিকে। ওর প্রসন্ন, হাসিমুখ নিমেষে ফ্যাকাশে হয়ে গেল আমার মুখ দেখে। কিন্তু কিছু বলল না। ও কিছুটা অবাক। চেয়ে আছে আমার দিকে।

-"আরে, বোস বোস কতো দেরি করবি আর।"

কাবিদুল দা বসে পড়ল। চোখমুখে অস্বস্তির ছাপ। আমিও চোখ সরিয়ে নিজের ভাতের থালার দিকে তাকালাম। মাসিমা এবার হেসে বললেন, "ওই তোর বিয়ে নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম।! তোর তো নিজের কোন চাড় নেই..."

কাবিদুল দা সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে তাকাল, বুঝতে পারলাম। আমি একমনে মাথা নামিয়ে ভাতের থালায় দুটো ভাত নিয়ে নাড়ছি তখন।


(ক্রমশ...)

(অনুগ্রহ করে ব্লগের নিচের কমেন্ট বক্সে জানান, কেমন লাগছে পড়ে। এতে উৎসাহ পাওয়া যায়।)

No comments:

Post a Comment